ইতিহাসের সাক্ষী: স্টার ওয়ার্স আর সিথ্রিপিও 

 

১৭ জানুয়ারি ২০১৬ শেষবার আপডেট করা হয়েছে ১৬:০৬ বাংলাদেশ সময় ১০:০৬ GMT
১৯৭৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল স্টার ওয়ারস - পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান-ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোর অন্যতম।
সেই ছবির একটি চরিত্র হচ্ছে একটি রোবট সিথ্রিপিও। এই চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছিলেন সেই এ্যান্টনি ড্যানিয়েলস স্মৃতিচারণ করেছেন বিবিসির সাইমন ওয়াটসের কাছে।
উনিশশ সত্তরের দশকের মাঝামাঝি এ্যান্টনি ড্যানিয়েলস ছিলেন একজন ধ্রুপদী রীতিতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন ইংরেজ অভিনেতা। তার এজেন্ট তার কাছে একটা প্রস্তাব নিয়ে এলো - হলিউডের একটা ছবিতে কাজ করার জন্য।
ছবির পরিচালকের নাম জর্জ লুকাস। ড্যানিয়েলস তার নাম আগে কখনো শোনেন নি।
এজেন্ট বললো, এই জর্জ লুকাস একটি বিচিত্র ধরণের সায়েন্স ফিকশন ছবি করবেন এবং তার জন্য তিনি চরিত্র বাছাই করছেন। ছবিটির তেমন কোন বড় বাজেট নেই, এবং চরিত্রটি হচ্ছে একটি রোবটের।
এজেন্ট ড্যারিয়েলসকে বোঝালো, এই আইডিয়াটা তোমার প্রত্যাখ্যান করা উচিত হবে না। কে জানে, এটা থেকে হয়তো একটা ভালো কিছুও হতে পারে।

জর্জ লুকাস এই মহাকাব্যিক সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র তৈরির জন্য ইংল্যান্ডে এসেছিলেন, কারণ তার ইচ্ছা ছিল কম বাজেটে ছবিটা করার।
তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ছোটবেলায় দেখা 'কাউবয়' বা 'ওয়েস্টার্ন' ছবি দিয়ে। ওয়েস্টার্ন ছবি হচ্ছে আমেরিকায় পৌরাণিক কাহিনীর মতো। লুকাস চেয়েছিলেন ভালো আর মন্দের দ্বন্দ্ব নিয়ে ওই রকমেরই একটি কাহিনী চিত্র বানাবেন - কিন্তু তা হবে পুরোপুরি বিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে।
স্টার ওয়ারসের নায়কদের মধ্যে ছিল লুক স্কাইওয়াকার-এর মতো নভোচারী মানুষ, রোমশ ভিনগ্রহের প্রাণী উকিস, আর সিথ্রিপিও'র মতো রোবট - যে মানুষের মতোই কথা বলতে পারে।
প্রথম প্রথম এন্টনি ড্যানিয়েলের মনে একটা সংশয় কাজ করছিল। তবে স্টার ওয়ার্স প্রকল্পের অফিসের দেয়ালে দেয়ালে টাঙানো সিথ্রিপিও রোবটের ছবি দেখে এবং তার ধাতব চোখের দিকে তাকিয়ে ড্যানিয়েলস চরিত্রটির প্রতি একটা আকর্ষণ বোধ করলেন।
ড্যানিয়েলসের রোবটটিকে পছন্দ হলো, আর জর্জ লুকাসেরও ড্যানিয়েলকে পছন্দ হলো। ফলে ড্যানিয়েলস চরিত্রটি পেয়ে গেলেন।

কয়েকটিদের মধ্যেই তার শরীরের মাপে সিথ্রিপিওর সোনালী রঙের ধাতব খোলসটা বানানোর কাজ শুরু হলো।
বাইরে থেকে এই ধাতব খোলস দেখতে ছিল দারুণ। কিন্তু এটা ভেতরে ঢুকে নড়াচড়া করা ছিল প্রায় অসম্ভব।
ড্যানিেয়লস বলছিলেন, "আমার অবস্থা ছিল একটা ধাতব কৌটায় ভরা মাছের মতো। সেটা ১৯৭৬ সাল, ইংল্যান্ডের সে বছর সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। স্টুডিওর ভেতরে অসংখ্য রকম লাইট জ্বলছে তাই সেখানেও ছিল ভীষণ গরম। তার ওপর আমি আছি ওই ধাতব খোলসে ভেতরে। ফলে আমার জন্য সে ছিল এক অবর্ণনীয় কষ্টের ব্যাপার। যখন আমি ওই খোলসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতাম, আমার শরীরটা একটা গলদা চিংড়ির মতোই লাল হয়ে থাকতো।"
এই ধাতব খোলস পরা অবস্থাতেই ড্যানিয়েলস সেই অতিমাত্রায় ভদ্র রোবট-ভৃত্যের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনয়ের কারণে সিথ্রিপিওকে মনে হতো যেন একজন ইংলিশ বাটলার বা খানসামা - তার কণ্ঠস্বর, গলা খাঁকারি দিয়ে ওই বিশেষ ভঙ্গীতে কথা বলায় মনে হতো যে সিথ্রিপিও একটা মহাজাগতিক যুদ্ধের মধ্যে পড়ে চরম অস্বস্তিতে আছে।
তার সঙ্গী হিসেবে জর্জ লুকাস আনলেন আর-টু ডি-টু-কে - যে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। একজনের সাথে আরেক জনের মেলে না। কিন্তু তারা দুজনে মিলে খুবই সুন্দর একটা নাটকীয় সংঘাত এবং বৈপরীত্য সৃষ্টি করে।.

তবে যখন এর চিত্রায়ন চলছিল তখন কিন্তু অভিনেতারা মোটেও্র নিশ্চিত ছিলেন না যে তারা কি করছেন। চিত্রনাট্যের সবকিছুই তাদের কাছে অদ্ভূত বলে মনে হচ্ছিল।
"আমার সবাই বুঝতে পারছিলাম, এই চিত্রনাট্যটাকে আমাদের কাছে একটা আজব জিনিস বলে মনে হচ্ছে। এর সংলাপের বিষয়বস্তু যা - তার সাথে আমাদের চেনা জানা কোন কিছুরই মিল ছিল ছিল না। হ্যারিসন ফোর্ড একবার পরিচালককে বলেছিলেন - "জর্জ, এসব সংলাপ লেখা যায়, কিন্তু বলা যায় না।" তবে অসুবিধা হলেও, আমরা সবই করেছিলাম পেশাদার হিসেবে। আর এ ছবি যে হিট করবে - তা আমরা কখনোই কল্পনা করতে পারি নি। বরং আমাদের সবারই মনে হচ্ছিল, এটা কিছুই হচ্ছে না।"
কিন্তু ১৯৭৭ সালের মে মাসে স্টার ওয়ার্স যখন মুক্তি পেলো, খুব দ্রুতই তা সর্বকালের অন্যতম বড় ঘটনায় পরিণত হলো।
সিথ্রিপিও রোবটও এই চলচ্চিত্রের অন্যতম তারকায় পরিণত হলো।
এন্টনি ড্যানিয়েল্স এর পরের পর্বগুলোতেও সিথ্রিপিওর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এখন তিনি এই সিরিজের একজন মুখপাত্রের মতোনই।
"সিথ্রিপিও আমার জীবনের অনেকখানি জুড়ে রয়েছে। লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপনিই কি সিথ্রিপিও? আমার ছোট ছেলেটি তো আপনার কথা বিশ্বাস করছে না ! আপনি কি কিছু বলবেন? তখন আমি সিথ্রিপিওর মতো গলা বানিয়ে বলি, 'হ্যালো ....' আর এই কণ্ঠ কানে যেতেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। হ্যাঁ, সে চিনতে পেরেছে। তখন আমি যে আনন্দ পাই, তার কোন তুলনা হয় না।"





 

যুক্তরাষ্ট্রে তুষার ঝড়ে এ পর্যন্ত অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু

 

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ তুষার ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাড়ে আট কোটির বেশি মানুষ।
'স্নোজিলা' নামের এই তুষার ঝড়ের কারণে এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।
তাদের অনেকেই খারাপ আবহাওয়াতে সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পরেছিলেন।
আরকানসাস, টেনেসি, কেনটাকি, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও ভার্জিনিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২০ অঙ্গরাজ্যে তুষার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
পূর্বাঞ্চলের ওই ঝড়ে ১১টি রাজ্যে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে।

অনেক এলাকাতে এর মধ্যেই আড়াই ফুটের বেশি তুষার জমেছে। সড়ক, রেল আর বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কয়েকটি রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় দুই লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঝড়ে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন ওয়াশিংটন, নিউইয়র্কের মতো বহু শহরের বাসিন্দারা।

ওয়াশিংটনের একজন বাসিন্দা, প্রভাতী দাস বিবিসিকে জানান, তুষারের কারণে তারা বাড়িতেই একপ্রকার বন্দী হয়ে পড়েছেন। কেউ বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। এখনো অনেক তুষার পড়ছে।
বিপদ মোকাবেলা করতে অন্যদের মতো তিনিও আগেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে ঘরে মজুত করে রেখেছেন।
প্রভাতী দাস বলছেন, ২০১০ সালেও এরকম একটি ঝড় হয়েছিল। কিন্তু সে বছরের তুলনায় এবার অনেকগুলো রাজ্যের উপর দিয়ে ঝড়টি যাচ্ছে। ফলে এবার অনেক বেশি মানুষ ঝড়ের কবলে পড়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝড়টি শনিবার পর্যন্ত চলবে। এই ঝড়ের কারণে এক বিলিয়ন ডলার বা আটশ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


 


দাবা খেলার বিরুদ্ধে সৌদি গ্রান্ড মুফতির মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ দাবাড়ুরা।
তাঁরা বলেছেন, দাবা এক নির্দোষ খেলা, যাতে বুদ্ধির চর্চা হয় এবং মস্তিস্ক ক্ষুরধার হয়।
সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ দাবা খেলাকে সময়ের অপচয় এবং এটি জুয়া খেলা উৎসাহিত করে বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেছেন, এই খেলা মানুষের মধ্যে শত্রুতা এবং ঘৃণা ছড়ায়।
ইউটিউবে তার এই বক্তব্য প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। কিন্তু সম্প্রতি এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা এবং বিতর্ক শুরু হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।




বাংলাদেশের খ্যাতিমান মহিলা দাবাড়ু রাণী হামিদ বলেন, দাবা খেলা সম্পর্কে সৌদি গ্রান্ড মুফতির এধরণের মন্তব্য শুনে তার খারাপ লেগেছে।
“লোকে হয়তো ভাববে, আমরা বুঝি খারাপ কোন কাজ করছি।”
রাণী হামিদ দাবা খেলছেন চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে। একটানা বারো বছরের বেশি জাতীয় মহিলা দাবায় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব।
“আমরা তো দাবা খেলি সময় কাটানোর জন্য, আনন্দের জন্য। এটা এত নির্দোষ একটা খেলা। দাবা খেললে বুদ্ধির চর্চা হয়, অংকে ভালো করা যায়। কারণ এটা তো বুদ্ধির খেলা।”
“আমি মনে করি পরনিন্দা বা পরচর্চার চেয়ে ঘরে বসে দাবা খেলা তো অনেক ভালো।”
রাণী হামিদ বলেন, জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি দাবা খেলে যাবেন।


দাবায় বাংলাদেশের প্রথম গ্রান্ড মাস্টার নিয়াজ মোর্শেদও একই ভাষায় সৌদি গ্রান্ড মুফতির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, দাবা খেলা নিয়ে কোন নেতিবাচক পদক্ষেপ কখনও টিকতে পারেনি।
“ভালোবাসা এবং সঙ্গীত যেভাবে আপনাকে আনন্দ দেয়, দাবা খেলা থেকেও আপনি সেই আনন্দ পেতে পারেন।”
নিয়াজ মোর্শেদ বলেন,“আয়াতোল্লাহ খোমেনি কিন্তু ইরানে দীর্ঘ সময় দাবা খেলা নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইরানে এক সময় দাবা খেলা হতো না। কিন্তু খোমেনি নিজেই কিন্তু আবার দশ বছর পর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
সাত বছর আগে গ্র্যান্ড মাষ্টার খেতাব পেয়েছেন বাংলাদেশের এনামুল হোসেন রাজিব। তিনিও বলেছেন, দাবা নিয়ে এসব নেতিবাচক কথাবার্তাকে তিনি কোন গুরুত্ব দিতে চান না।


দাবা খেলার যে সৌন্দর্য, এটা যদি আমরা মানুষকে বোঝাতে পারি, তখন অনেকেই এটাতে আগ্রহী হবে। এটা অনেকটা ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের মতো।”
উল্লেখ্য দাবা বাংলাদেশেও যথেষ্ট জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে পাঁচজন গ্র্যান্ড মাষ্টার এবং ১৪ জন ফিদে গ্র্যান্ড মাষ্টার রয়েছেন।

Khushi Hoci !