রিপাবলিকান বিতর্ক বিনে পয়সার ‘সার্কাস’

রিপাবলিকান বিতর্ক

বিনে পয়সার ‘সার্কাস’

হাসান ফেরদৌস, যুক্তরাষ্ট্র | আপডেট:
শনিবার রাতে সাউথ ক্যারোলাইনার গ্রিনভিলে অনুষ্ঠিত হলো নবম রিপাবলিকান বিতর্ক। সেখানে সমবেত হাজার দুয়েক দর্শক হয়তো আশা করেছিলেন বিতর্কে অংশগ্রহণকারী প্রেসিডেন্ট পদে দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী অবশিষ্ট ছয় প্রার্থী বিভিন্ন জাতীয় প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তাকে বলা যায় ‘বিনে পয়সার সার্কাস’।

বিতর্কের গোড়া থেকেই প্রত্যেকে একে অপরের বিরুদ্ধে মুখিয়ে ছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জেব বুশকে বললেন দুর্বল ও মিথ্যাবাদী। বুশ ডোনাল্ডকে বললেন দুর্বল ও প্রতারক। মার্কো রুবিও ও টেড ক্রুজ একে অপরের দিকে আঙুল তুলে বললেন, তুমি ডাহা মিথ্যুক, অভিবাসন নিয়ে তুমি আজ এক, কাল ভিন্ন কথা বলো। গলা এক মাত্রা চড়িয়ে ট্রাম্প ক্রুজকে বললেন, সে জেব বুশের চেয়েও বড় মিথ্যাবাদী। এই তর্ক-বিতর্কে বিরক্ত হয়ে জন কেইসিক বললেন, এসব হচ্ছে পাগলের কাণ্ড। সে কথায় সম্মতি জানিয়ে কারসন বললেন, ঠিক এই জন্য তিনি রাজনীতিকদের পছন্দ করেন না।
এর আগের প্রতিটি বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিস্তর বিষোদগার করেছেন, কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুড়ি কখনোই এমন কাদায় মল্লযুদ্ধে পরিণত হয়নি। ২০ ফেব্রুয়ারি সাউথ ক্যারোলাইনায় রিপাবলিকান দলের পরবর্তী প্রাইমারি। তার আগে যে যেভাবে পারবেন, একে অপরকে ধরাশায়ী করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা যে ভদ্রতার সীমারেখা অতিক্রম করবে, সেটা হয়তো কেউ আশা করেনি।
বিতর্কের সঞ্চালক অভিযোগ করলেন, ট্রাম্প কখনো কখনো অশ্লীল ভাষায় তাঁর বক্তব্য দিয়ে থাকেন। উত্তরে ট্রাম্প স্বীকার করলেন, কোনো কোনো সময় উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে তিনি স্থূল শব্দ ব্যবহার করেছেন, কিন্তু আর করবেন না। এ কথা বলার পরেও তিনি দর্শকদের মনে করিয়ে দিলেন, তিনি নন, নোংরা কথার রাজা হলেন জেব বুশ। গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের কাছে জেব অভিযোগ করেছিলেন, তিনি যদি প্যান্ট খুলে নাচতে থাকেন, তবুও সাংবাদিকেরা তাঁর দিকে মনোযোগ দেবেন না।
গতকালের বিতর্ক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে জানা যায়, বিতর্কিত ও রক্ষণশীল সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আন্তোনিন স্কালিয়া মারা গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামাই তাঁর উত্তরসূরি মনোনয়ন দেবেন। বিতর্কের প্রথম ১৫ মিনিট রিপাবলিকান প্রার্থীরা একদিকে স্কালিয়ার গুণকীর্তন, অন্যদিকে কোনোভাবেই যাতে ওবামা তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে কাউকে মনোনয়ন না দেন, সেই দাবি জানাতে ব্যয় করেন। একমাত্র জেব বুশ স্বীকার করেন, শাসনতন্ত্র অনুসারে ওবামারই মনোনয়ন দেওয়ার কথা, তবে সেই মনোনয়ন যাতে কোনো সর্বসম্মত প্রার্থী হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিচিত বিষয়ের বাইরে এই প্রথমবার সম্পূর্ণ নতুন যে বিষয় নিয়ে ট্রাম্প অন্যান্য রিপাবলিকান প্রার্থীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তা হলো সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক অভিযান। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, সাদ্দাম হোসেনের কাছে কোনো আণবিক মারণাস্ত্র ছিল না, মিথ্যা কথা বলে বুশ ইরাক আক্রমণ করেন, যার ফলে শুধু যে বিপুল অর্থের অপচয় ও মানব জীবন ধ্বংস হয় তা-ই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করে তোলা হয়।

জর্জ বুশের পক্ষসমর্থন করে মার্কো রুবিও মন্তব্য করেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ৯/১১-এর আক্রমণের সময় হোয়াইট হাউসে যে আল গোর নয়, জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সে জন্য তিনি খুব খুশি। কারণ, বুশ আমেরিকাকে নিরাপদ রেখেছিলেন। তাঁর সে কথা শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্প চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, বুশের আমলেই তো ৯/১১-এর আক্রমণ হয়, তাহলে নিরাপদ রাখা হলো কী করে? ট্রাম্পের সে কথা শুনে দর্শকদের একাংশ তাঁর উদ্দেশে দুয়ো দুয়ো ধ্বনি করে ওঠে।
সাউথ ক্যারোলাইনার রক্ষণশীল ভোটারদের কাছে ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে এমন সরাসরি সমালোচনা হয়তো অপ্রত্যাশিত ছিল। জর্জ বুশের সমালোচনাও তাঁরা ভালো চোখে দেখবেন না। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেও অনেক বিব্রতকর কথা বলে পার পেয়ে গেছেন। বস্তুত তিনি রাজনীতিকের মতো, যা বিশ্বাস করেন‍- তা-ই বলেন, এমন একটি ধারণার জন্য এখনো জাতীয়ভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় রিপাবলিকান প্রার্থী। এমনকি সাউথ ক্যারোলাইনাতেও তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১০-১২ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে তিনি এগিয়ে আছেন।

SHARE THIS

Author:

Previous Post
Next Post