বছরে ৫৫ লাখ মানুষের মৃত্যু
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্পের আওতায় এই উপাত্ত সংকলন করা হয়েছে। তাদের গবেষণার অনুসন্ধান উপস্থাপন করা হয়েছে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের বার্ষিক বৈঠকে।
গবেষণায় সম্পৃক্ত বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গবেষণায় প্রাপ্ত পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, জনগণকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য এই বাতাসের মান উন্নয়নে কিছু দেশকে কতটা জোরে পা চালিয়ে হাঁটতে হবে।
বিষয়টির ব্যাখ্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনভিত্তিক হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ড্যান গ্রিনবাম বলেন, ‘বেইজিং ও দিল্লিতে এখন বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ দিনে প্রতি কিউবিক মিটারে সূক্ষ্ম কণা (পিএম ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত) ৩০০ মাইক্রোগ্রামেরও বেশিতে উঠতে পারে। অথচ, পরিমাণটা ২৫ থেকে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরল বা কঠিন কণাসমৃদ্ধ বাতাস নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হলে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলায় গত কয়েক দশকে উন্নত দেশগুলো বড় ধরনের অগ্রগতি সাধন করেছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বায়ুর মান খারাপ হওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যুহার এখন পর্যন্ত বেড়েই চলেছে।
ওই গবেষণা মোতাবেক, অপুষ্টি, স্থূলতা, অ্যালকোহল ও ওষুধের অপব্যবহার এবং অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের মতো বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে, বায়ুদূষণের কারণে ঘটে তার চেয়ে বেশি। গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ প্রজেক্ট এ ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে চতুর্থ বৃহত্তম ঝুঁকি হিসেবে বর্ণনা করেছে। উচ্চ রক্তচাপ, খাদ্যাভ্যাস ঝুঁকি ও ধূমপানের পরেই এর স্থান দিয়েছে তারা।
বায়ুদূষণে অকালমৃত্যুর সর্বশেষ উপাত্ত পাওয়া গেছে ২০১৩ সালের। সে মোতাবেক, প্রতিবছর চীনে ১৬ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে বায়ুদূষণে। ভারতের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কমবেশি ১৩ লাখ। অবশ্য, দেশ দুটিতে দূষণের উৎসে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। চীনে প্রধান কারণ পোড়ানো কয়লা থেকে নির্গত কণা। শুধু এই কণাই দেশটিতে বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে গবেষণায় দেখানো হয়েছে।
এই গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং বেইজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী কিয়াও মা বলেন, ‘সুতরাং, কয়লাভিত্তিক শিল্প ও অন্যান্য খাত থেকে ক্ষুদ্র কণিকার নির্গমন কমাতে জরুরি ভিত্তিতে অধিকতর জরুরি নীতি গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’
ভারতে যেসব সমস্যা বিশেষভাবে মনোযোগ কেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রান্নাবান্না ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কাজে কাঠ, গোবর, ফসলের উচ্ছিষ্ট ও অন্যান্য উপাদান পোড়ানো। মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় এই ‘অন্দরের দূষণ’ হার মানাচ্ছে ‘বহিরাঙ্গনের দূষণ’কে। আর ভারতের বর্তমান অর্থনীতির ধারার ওপর চোখ রেখে গবেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে দেশটির বাতাসের মান আরও খারাপ পর্যায়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
মুম্বাইভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক চন্দ্র ভেঙ্কটরমন বলছেন, প্রস্তাবিত নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ নীতির পরও দেশে বিদ্যুতের চাহিদার পাশাপাশি শিল্প উৎপাদন বেড়ে চলেছে। সুতরাং, এই প্রবৃদ্ধি সেই নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ নীতিকে ছাপিয়ে যাবে। ২০৫০ সাল নাগাদ বায়ুদূষণ আরও বাড়বে।